বাংলা সাহিত্য

বাংলা সাহিত্যের প্রধান সাহিত্যিক ও সাহিত্যকর্ম 

                             রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)

 

জন্ম: ৭ মে ১৮৬১ (২৫ বৈশাখ ১২৬৮) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের আসল পদবি ছিল ‘কুশারী’। পারিবারিকভাবে তারা জমিদার ছিলেন।

পিতা-মাতা: মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সারদা দেবী।

পিতামহ-পিতামহী: প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ও দিগম্বরী দেবী।

জন্মক্রম: তিনি বাবা-মার চতুর্দশতম সন্তান এবং অষ্টম পুত্র। রবীন্দ্রনাথেরা পনেরাে ভাইবােন ছিলেন। 

শিক্ষার হাতেখড়ি :  বিভিন্ন শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে স্বগৃহে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। স্কুলসমূহ ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমী স্কুল এবং সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল।

ধর্ম: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ পীরালি ব্রাহ্মণ বংশের হলেও তাঁর পুত্র অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজা রামমােহন রায় প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথও এ ধারা অনুসরণ করেন।

বিলেতযাত্রা:  ১৮৭৮ সালে মেজভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড গমন।

ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন:  ১৮৭৮ সালে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক হেনরি মালির কাছে মাস তিনেক ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: দেড় বছর পর পিতার নির্দেশে শিক্ষা অসম্পন্ন রেখে স্বদেশে ফিরে আসেন (১৮৮০)। বিলেত যাত্রা দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ড যাত্রা করেন ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে (১৮৮১)। কিন্তু শিক্ষা সমাপ্ত করেননি।

বিবাহ : খুলনার দক্ষিণডিহি গ্রামের মেয়ে ভবতারিণী দেবীর সাথে ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে শ্বশুরবাড়িতে ভবতারিণীর নাম বদলে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী।

ছদ্মনাম: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নয়টি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। এগুলাে হলাে : ভানুসিংহ ঠাকুর; অকপটচন্দ্র ভাস্কর; আন্নাকালী পাকড়াশী; দিকশূন্য ভট্টাচার্য; নবীন কিশাের শর্মন; ষষ্ঠীচরণ দেবশর্মা: বানীবিনােদ বিদ্যাবিনােদ; শ্রীমতি কনিষ্ঠা; শ্রীমতি মধ্যমা।

চৈনিক নাম: রবীন্দ্রনাথের চৈনিক নাম ‘চু তেন তান’।

ব্রাহ্ম সমাজের দায়িত্ব: ১৮৮৪ সাল থেকে আদি ব্রাহ্ম সমাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মাসিক বালক-এর নিয়মিত লেখক : ১৮৮৫ সালে সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সম্পাদনায়  ’মাসিক বালক’  পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন।

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ: ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হলে নবীনচন্দ্র সেনের সঙ্গে তিনিসহ-সভাপতি মনােনীত হন।

ভারতী পত্রিকা সম্পাদনা: তিনি এক বছরের জন্য ভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

কুষ্টিয়ার শিলাইদহে : ১৮৯৮ সালে কবি কলকতার পৈতৃক ভবন ছেড়ে সপরিবারে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে চলে আসেন।

স্বাস্থ্যবিষয়ক উক্তি : শরীরকে বঞ্চিত করে কেবল মুখে রক্ত জমলে তাকে স্বাস্থ্য বলা যায় না।

শান্তিনিকেতনে বসবাস: ১৯০১ থেকে বীরভূম জেলার বােলপুর গ্রামের বোলপুর গ্রামের প্রান্তদেশে ’শান্তিনিকেতনে’- এ পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯০১ সালে বােলপুরের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

বঙ্গভঙ্গের বিরােধিতা: ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি রচনা করেন।

সংবর্ধনা: ১৯১২ সালে তার পঞ্চাশ বর্ষপূতি উপলক্ষে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে কবিকে ১৯১২ সালের ২৮ জানুয়ারি সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। 

ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প: রবীন্দ্রনাথ প্রথম বাঙালি, যিনি প্রথম গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠা উন্নয়ন প্রকল্প করেন। তিনি পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমেরিকার আরবানীয় ইলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান কৃষি ও পশুপালন বিদ্যায় প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে।

গীতাঞ্জলি’ অনুবাদ: ১৯১২ সালের মে মাসে পুত্র ও পুত্রবধূসহ ইংল্যান্ড গমন। পথিমধ্যে জাহাজে ‘গীতাঞ্জলি ও ইংল্যান্ড গমন কাব্য ও অন্যান্য কাব্য থেকে কিছু কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করে ‘Song Offerings নামে গ্রন্থ প্রকাশ, যার ভূমিকা লেখেন ইংরেজ কবি WB Yeats।

নােবেল পুরস্কার লাভ : ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘Song Offerings’ গ্রন্থের জন্য নােবেল পুরস্কার পান । তিনি শুধু নােবেল পুরস্কার পাওয়া প্রথম ভারতীয় নন, এশীয় হিসেবেও তিনিই এ পুরস্কার পাওয়া প্রথম ব্যক্তিত্ব। ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে মােট ১৫৭টি কবিতা ও গান রয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট (১৯১৩), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট (১৯৪০), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট (১৯৩৬)।

রবীন্দ্রনাথের গদ্য রচনার ভিন্ন মােড়:  ১৯১৪ সালের মে মাসে প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘মাসিক সবুজপত্র প্রকাশের পর থেকে রবীন্দ্রনাথের গদ্য রচনাশৈলী ভিন্ন মােড় নেয়। 

নাইটহুড উপাধি ত্যাগ: ১৯১৫ সালে তৎকালীন ভারত সরকার তাকে ‘স্যার’ বা ‘নাইটহুড’ উপাধি প্রদান করেন ।১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইটহুড’ উপাধি ত্যাগ  করেন। 

বিশ্বভারতী পরিষদ: বিশ্বভারতী পরিষদ গঠন ও সংবিধান প্রণয়নের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ১৯২১-এর  ২৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানকে সর্বসাধারণের হাতে তুলে দেন।

জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা: রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি দুটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা।  বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আমার সােনার বাংলা'(সুরকার রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং)  ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’।  

ভারত রাখি উৎসব:  হিন্দু-মুসলমান মিলনের জন্য তিনি রাখি উৎসবের প্রচলন করেন । 

 

এক নজরে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি 

কাব্যগ্রন্থ – ৫৬
উপন্যাস – ১২
ছোটগল্প – ১১৯
নাটক – ২৯
কাব্যনাট্য – ১৯
ভ্রমণকাহিনী – ৯
গান – ২২৩২
চিঠিপত্র – ১৩
গীতিপুস্তক – ৪

সাহিত্যকর্ম  কাব্যগ্রন্থ-
বনফুল(১৮৭৫)
সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২
প্রভাতসংগীত (১৮৮৩)
ছবি ও গান (১৮৮৪
শৈশব সংগীত (১৮৮৪
প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৬)
ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (১৮৮৪)
কড়ি ও কোমল (১৮৮৬)
মানসী (১৮৯০)
সোনারতরী (১৮৯৪)
চিত্রা (১৯৯৬)
চৈতালী (১৮৯৬)
কথা (১৯০০)
কাহিনী (১৯০০)
ক্ষণিকা (১৯৯৯)
কল্পনা (১৯৯৯)
নৈবেদ্য (১৯০১)
স্মরণ (১৯০২-০৩)
শিশু (১৯০৬)
খেয়া (১৯০৬)
গীতাঞ্জলি (১৯১০)
উৎসর্গ (১৯১৪)
গীতিমাল্য (১৯১৫)
বলাকা (১৯১৬)
পূরবী (১৯২৫)
মহুয়া (১৯২৯)
বনবাণী (১৯৩১)
পুনশ্চ (১৯৩২)
শ্যামলী (১৯৩৬)
বিচিত্রিতা (১৯৩৩)
শেষ সপ্তক (১৯৩৫)
বীথিকা (১৯৩৫)
পত্রপুট (১৯৩৬)
খাপছাড়া (১৯৩৭)
ছড়া ও ছবি (১৯৩৭)
প্রান্তিক (১৯৩৮)
সেঁজুতি (১৯৩৮)
প্রহাসিনী (১৯৩৯)
আকাশ প্রদীপ (১৯৪০)
নবজাতক (১৯৪০
সানাই (১৯৪০)
রোগশয্যায় ((১৯৪০)
আরোগ্য (১৯৪১)
জন্মদিনে (১৯৪১)
শেষ লেখা(১৯৪১)

উপন্যাস-

মালঞ্চ (রোমান্টিক- ১৯৩৪)
রাজর্ষি (ঐতিহাসিক- ১৮৮৭)
গোরা (রাজনৈতিক- ১৯১০)
দুইবোন(রোমান্টিক- ১৯৩৩)
বৌ ঠাকুরাণীর হাট (ঐতিহাসিক-১৮৮৩)
চোখের বালি (সামাজিক- ১৯০৩)
নৌকাডুবি (সামাজিক- ১৯০৬)
শেষের কবিতা (কাব্যধর্মী- ১৯২৯)
ঘরে বাইরে (রাজনৈতিক- ১৯১৬)
চার অধ্যায় (রাজনৈতিক- ১৯৩৪)
চতুরঙ্গ (রোমান্টিক- ১৯১৬)
যোগাযোগ(সামাজিক- ১৯২৯)
– আরো দুইটি উপন্যাস. যেগুলোকে স্বার্থক উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয় না- করুণা ও প্রজাপতির নিবন্ধ।

প্রবন্ধ
আত্মশক্তি (১৯০৫)
ভারতবর্ষ (১৯০৬)
স্বদেশ (১৯০৮)
শিক্ষা (১৯০৮)
রাজা প্রজা (১৯০৮)
ধর্ম (ধর্ম বিষয়ক- ১৯০৯)
শান্তি নিকেতন (১৯০৯)
মানুষের ধর্ম (১৯৩৩)
পরিচয় (১৯১৬)
কালান্তর (প্রবন্ধ সংকলন- ১৯৩৭)
সভ্যতার সংকট (১৯৪১)
বিচিত্র প্রবন্ধ

গল্পগ্রন্থ-
ছোটগল্প
গল্পগুচ্ছ
গল্পসল্প
সে

নাটক-
রুদ্রচণ্ড (কাব্যনাট্য-১৮৮১)
রাজা ও রানী (১৮৯৬)
বাল্মীকি প্রতিভা (গীতিনাট্য- ১৮৮১)
চিত্রাঙ্গদা (নাট্যকাব্য- ১৮৯২)
মুকুট (১৯০৮)
প্রকৃতির প্রতিশোধ (গীতিনাট্য- ১৮৮১)
প্রায়শ্চিত্ত (১৯০৯)
রাজা (সাংকেতিক- ১৯২৬)
চিরকুমার সভা (কমেডি-১৯২৬)
অচলায়তন (সাংকেতিক-১৯২৬)
ডাকঘর (১৯১২)
রক্তকরবী (সাংকেতিক- ১৯১৬)
মুক্তধারা (সাংকেতিক-১৯২৫)
কালের যাত্রা (সাংকেতিক- ১৯৩২)
বিসর্জন (১৮৯১)
বসন্ত (১৯২৩)

প্রবন্ধ সাহিত্য-
প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭)
সাহিত্য (১৯০৭)
আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭)
লোক সাহিত্য (১৯০৭)
সাহিত্যের পথে (১৯৩৬)
সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩)

ভ্রমণ কাহিনী-
রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১)
য়ুরোপ প্রবাসীর ডায়েরী (১৮৯১)
জাপান যাত্রী (১৯১৯)
য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র (১৮৮১)

জীবন কথা-
ছেলে বেলা (১৯৪০
জীবন স্মৃতি (১৯১২)
পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)

 

Share on

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 13 =