বাংলাদেশের সংবিধান

বাংলাদেশের সংবিধান :-লেকচার-৫

সংবিধান হলো একটি রাষ্ট্রের মূল আইন বা সর্বোচ্চ আইন। সংবিধান হলো কতগুলো লিখিত ও অলিখিত আইনের সমষ্টি যার দ্বারা একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, একটি রাষ্ট্রের শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে এবং সরকারের তিনটি অঙ্গের ( শাসন, আইন, বিচার) মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

সংবিধান দুই প্রকার: লিখিত ও অলিখিত।
⇒ সৌদি আরব, নিউজিল্যান্ড, স্পেন ও বৃটেন এর সংবিধান অলিখিত ।
⇒ পরিবর্তনের ভিত্তিতে সংবিধান দুই প্রকার; সুপরিবর্তনীয়: অর্ধেকের একটি ভোট বেশি প্রয়োজন।
⇒ দুষ্পরিবর্তনীয়: দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন ।
⇒ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংবিধান ৩৯৫ অনুচ্ছেদ।
⇒ পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রের-৩৩টি অনুচ্ছেদ।
প্রথম অন্তবর্তীকালীন সংবিধান “ স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র ” (২৬ মে মার্চ থেকে ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ কার্যকর)
দ্বিতীয় অন্তবর্তীকালীন সংবিধান ১১ জানুয়ারী ৭২ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক “অস্থায়ী সংবিধান আদেশ (যা ১১ জানুয়ারি ৭২ থেকে ১৫ ডি. ৭২ পর্যন্ত কার্যকর )।
♦  বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গণপরিষদ আদেশ জারি ২৩ মার্চ/৭২; যা কার্যকর হয় ২৬ মার্চ ১৯৭২।
♦ গণপরিষদঃ সংবিধান রচনার জন্য যে পরিষদ তাকে গণপরিষদ বলে। ১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে জয়ী পকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ১৬৯ এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ জন মোট ৪৬৯ জন নিয়ে গঠিত হওয়ার কথা। তবে ৪০৩ (উচ্চ মাধ্যমিক)/ ৪০৪ জন (বাংলাপিডিয়া) সর্বশেষ ৪৩০ জন নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়।
♦ ১০ এপ্রিল ১৯৭২ গণ পরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ।
গণ পরিষদের প্রথম স্পীকার শাহ আব্দুল হামিদ ও প্রথম ডিপুটি স্পীকার মুহাম্মদ উল্লাহ নির্বাচিত হন।
♦ ১১ এপ্রিল ১৯৭২, ৩৪ জন সদস্য বিশিষ্ট খসড়া সংবিধান রচনা কমিটি গঠন করা হয়। যার প্রধান ড: কামাল হোসেন ; একমাত্র মহিলা সদস্য বেগম রাজিয়া বানু ,৩৩ জন আওয়ামী লীগ, একজন বিরোধী দলের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত NAP মোজাফ্ফর,
♦ যুক্তরাজ্য ও ভারতের সংবিধান ও UDHR কে গুরুত্ব দিয়ে খসড়া সংবিধান রচিত হয় ।
♦ ১২ অক্টোবর খসড়া সংবিধান গণপরিষদে উত্থাপন
♦  ৪ ঠা নভেম্বর গণপরিষদে গৃহিত (৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশ সংবিধান দিবস পালিত)
♦ ১৪ ডি. গণপরিষদের সদস্যরা মূল সংবিধানে স্বাক্ষর করে
♦ ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর
♦ হস্তলিখিত সংবিধানে ৯৩টি পাতা ছিল। হস্তলিখিত সংবিধানের মূল লেখক-আব্দুর রউফ।
♦ হস্তলিখিত সংবিধানের অঙ্গসজ্জা করেন শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন।
♦ বাংলাদেশের সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা, ৭টি তফশীল, ১১টি ভাগ, এবং ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।

১ম : প্রজাতন্ত্র ১-৭
২য় : রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি ৮-২৫
৩য় : মৌলিক অধিকার ২৬-৪৭
৪র্থ: নির্বাহী বিভাগ ৪৮-৬৪
৫ম : আইন বিভাগ ৬৫-৯৩
৬ষ্ঠ: বিচার বিভাগ ৯৪-১১৭
৭ম: নির্বাচন কমিশন ১১৮-১২৬
৮ম: মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক ১২৭-১৩২
৯ম: কর্ম কমিশন ১৩৩-১৪১
১০ম: সংশোধনী ১৪২
১১ম: বিবিধ ১৪৩-১৫৩

                                                                                            প্রজাতন্ত্র——(১-৭)
অনু : ১: বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাহা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে পরিচিত হইবে।
২ : প্রজাতন্ত্রের রাষ্টীয় সীমানা : ১৯৭১ সালের তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের সীমানা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানা হিসাবে গন্য হইবে।
২ক : প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ( ৮ম সংশোধনী)
৩ : রাষ্ট্রভাষা বাংলা
৪ : জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা ও প্রতীক
৪ ক: জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শণ (১৫তম সংশোধনী)
৫: প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ঢাকা
৬ (২): জাতি হিসাবে বাঙ্গালি এবং নাগরিকত্ব বাংলাদেশী
৭ (১): প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন
৭ (২): সংবিধান সর্বোচ্চ আইন, এর সাথে অসামঞ্জস্য কোন আইন করা যাবে না
৭ (ক): সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি, রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ (১৫তম সংশোধনী)
৭ ( খ): সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য: প্রস্তাবনা, ১ম, ২য়, ৩য়, এবং নবম ভাগের ক, ১৫০ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন অযোগ্য
( ১৫তম সংশোধনী)
রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি: ৮-২৫
৮(১): জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ও ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি
৮ (২):

৯: জাতীয়তাবাদ: ভাষাগত ও সংস্কৃৃতিগত ভাবে বাঙালী জাতি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি
১০: সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি:
১১: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার:
১২ : ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা:
১৩ : মালিকানার নীতি: ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও যৌথ মালিকানা
১৪ : কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্তি
১৫ : মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা :
১৬: গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব :

১৭: অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা
১৮: জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা: ( মদ, জুয়া, গনিকাবৃত্তি প্রভৃতি বন্ধ)
১৮ (ক): পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (১৫তম সংশোধনী)
১৯ (১): সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
১৯ (৩): জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহন ও সুযোগের সমতা।
২০ : অধিকার ও কর্তব্যরূপে কর্ম: কর্ম হলো কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার
২১(১)নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য: সংবিধান ও আইন মেনে চলা, জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।
২১(২): জনগনের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।
২২ঃ নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ
২৩: জাতীয় সংস্কৃতি: রাষ্ট্র জনগনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
২৩ (ক): উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বিকাশের ব্যবস্থা রাষ্ট্র করবে।
২৪: জাতীয় স্মৃতিনিদর্শণ প্রভৃতি সংরক্ষণ করবে রাষ্ট্র
২৫: আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন: জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্নিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা এই সকল নীতি হইবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পের্কের ভিত্তি।
(ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জণ্য চেষ্টা করিবে।
(খ) প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করিবে এবং
(গ) সা¤্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ ও বর্ণবৈষ্যমের বিরুদ্ধে বিশ্বের সবর্ত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করিবে।
সংক্ষেপে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়।

Share on

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + 18 =