গুরুত্বপূর্ণ বাগধারা ও প্রবাদ- প্রবচন

গুরুত্বপূর্ণ ৭০ টি বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন -অ

1.অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া) প্রায় বছরখানেক ভুগে কাল রাতে সৈয়দ সাহেব অক্কা পেয়েছেন।

2.অতিদর্পে হতা লঙ্কা (বেশি অহংকারে পতন)- লােকটি কালাে টাকার জোরে কাউকে পাত্তাই দিতাে না; এখন কেমন ফল ফললাে, একেই বলে অতিদর্পে হতা লঙ্কা।

3.অগস্ত্য যাত্রা (শেষ প্রস্থান)– শ্বশুরের সাথে ঝগড়া করে জামাতা একেবারে অগস্ত্য যাত্রা করল।

4.অষ্টব সম্মিলন (প্রতিভাবান ব্যক্তিদের একত্র সমাবেশ)- মওলানা আকরাম খার সভাপতিত্বে বাংলা সাহিত্যের অষ্টবজ্র সম্মিলন হয়েছিল।

5.অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী (অল্প বিদ্যার গর্ব)—অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী বলেই অর্বাচীন গফুর মিয়া বাংলাদেশের সেরা বৈজ্ঞানিক ড. কুদরত-ই-খুদার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সমালােচনায় অগ্রসর হলাে।

6.অগাধ জলের মাছ (অত্যন্ত কৌশলী)— কথাবার্তায় সাদাসিধে হলেও লােকটি অগাধ জলের মাছ, ওর প্রকৃত পরিচয় পেতে একটু দেরি হবে।

7. অন্ধের যষ্টি (একমাত্র অবলম্বন)—বৃদ্ধা জননীর অন্ধের যষ্টি পুত্রটি অকালে প্রাণ হারালো ।

8. অর্ধচন্দ্র দান (গলাধাক্কা দেয়া) চোরটার মায়াকান্নায় কর্ণপাত করাে না, বেশ। করে অর্ধচন্দ্র দান করে বিদায় কর।

9. অগ্নিশর্মা হওয়া (অত্যন্ত রাগান্বিত হওয়া) সাহেব বড় বদমেজাদি, তার কথার : ওপর কথা বলতেই অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন।

10. অন্তরটিপুনী (মর্মপীড়াদায়ক)– তােমার কথা শুনলে গা জ্বালা করে, তুমি প্রত্যেক কথাতেই অন্তরটিপুনী দিতে ওস্তাদ।

11. অগ্নি পরীক্ষা (চরম পরীক্ষা)– বাঙালি জাতি একাত্তর সালে চরম অগ্নি পরীক্ষায় জয়লাভ করেছে।

12.অকূলে কূল পাওয়া (নিরূপায় অবস্থা হতে উদ্ধার পাওয়া)- এই ঘােরতর দুর্দিনে : তােমার সাহায্য পেয়ে যেন অকূলে কূল পেলাম।

13. অনুরােধে পেঁকি গেলা (অসম্ভবকার্য সম্পাদন করা)– কাজটা খুবই কঠিন, = তারপরও অধ্যক্ষের অনুরােধে পেঁকি গিলতে হচ্ছে।

14.অলক্ষ্মীর দশা (দারিদ্র)— পিতা পুত্রের বাড়িতে গিয়ে দেখেন যে, তার পুত্র অলক্ষ্মীর দশায় পতিত হয়েছে।

15.অধঃপাতে যাওয়া (উচ্ছন্নে যাওয়া) হাতে অতিরিক্ত টাকা পাবার ফলেই ছেলেটা অধঃপাতে গেছে।

16. অধমে অধমে (মন্দের সঙ্গে মন্দে/খারাপের সঙ্গে খারাপে)– উত্তমে উত্তমে যেমন মেলে তেমনি মেলে অধমে অধমে।

17. অনধিকার চর্চা (যে বিষয়ে তেমন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে হস্তক্ষেপ/যে বিষয় তেমন জানা নেই সেই বিষয়ে অযথা আলােচনা)– আমি ভাই ব্যবসায়ী লােক, সাহিত্যের আলােচনায় যােগ দিয়ে অনধিকার চর্চা করতে চাই না।

18.অনন্তশয্যা (মৃত্যু, শেষ শয্যা)— আমাকে ডাকলেই হতাে—আমি তাে আর অনন্ত শয্যায় শুয়ে ছিলাম না।

19.অনভ্যাসের ফোটা (অনভ্যস্ত সৌভাগ্য)– গরিবের টাকা হয়েছে; এ তাে অনভ্যাসের ফোঁটা—সইতে সময় লাগবে।

20.অনর্থ করা, অনর্থ বাধানাে (বিপদ সৃষ্টি করা/গােলমাল পাকানাে) তার কথামতাে কাজ না করলে কিন্তু সে অনর্থ করবে। |

21.অনলে জল পড়া (ক্রোধ প্রশমিত হওয়া, রাগ পড়ে যাওয়া)- “চিঠি পড়িবামাত্র অনলে জল পড়িল-গৃহিনী কিছুকাল ভাবিয়া বলিলেন, এ দুঃখিনীর কি এমন কপাল হবে।’

22.অনাসৃষ্টি, অনাসৃষ্টি কাণ্ড (সৃষ্টিছাড়া ব্যাপার/উদ্ভট কাজকর্ম)– মা মাত্র এক ঘণ্টার জন্য বাইরে গেছেন, এরই মধ্যে এমন অনাসৃষ্টি কাণ্ড বাধিয়ে বসেছ?

23.অনুনয়-বিনয় (সনির্বন্ধ অনুরােধ, অনুরােধ-উপরােধ) আমাদের শত অনুনয়বিনয়েও সে কর্ণপাত করল না।

24.অন্ধ বিশ্বাস (যুক্তিহীন বিবেচনাহীন প্রবল বিশ্বাস)- অন্ধবিশ্বাস থেকেই কুসংস্কারের জন্ম হয়। অন্ধভক্তি (যুক্তিবর্জিত গভীর ভক্তি) – তিনি যুক্তিবাদী লােক, এসব অন্ধভক্তিকে আমল দেন না।

24.অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া (পুরােপুরি আন্দাজে কাজ করা, অনুমানের ওপর নির্ভর করে কিছু করা বা বলা)— অন্ধকারে ঢিল না ছুঁড়ে কি হয়েছিল জানতে চেষ্টা করাে।

25.অন্ধিসন্ধি (ফঁকফোকর/গােপন তথ্য)— এই ব্যবসার অন্ধিসন্ধি কেবল তারই জানা আছে।

27.অন্ন ধ্বংস করা (অলসভাবে জীবন কাটানাে এবং নির্বিকারভাবে খেয়ে যাওয়া) এতদিন তাে আমার অন্ন ধ্বংস করলে, এবার কিছু কাজের চেষ্টা কর।

28.অপােগণ্ড (নাবালক) দুটি অপােণ্ড ভাই নিয়ে কি করে চালিয়ে এসেছি তা আমি জানি।

29. অবরেসরে, অবুরে সবুরে (কখনাে-সখনাে, কালে-ভদ্রে)—সে অবরেসবরে গ্রামের বাড়িতে যায়।

30.অমৃতে অরুচি (পছন্দসহ খাবারে বা ভালাে জিনিসে অনিচ্ছা)– তুমি কী সত্যিই ধূমপান ছেড়ে দিয়েছ? হঠাৎ অমৃতে এমন অরুচি হলাে কেন?

31.অম্বল চাখা, অম্বল চেখে বেড়ানাে (ক্রমাগত জায়গা বা চাকরি বদল করা/ এক জায়গায় বা এক চাকরিতে স্থায়ী না হওয়া)- এভাবে অম্বল চেখে না বেড়িয়ে | এবার স্থির হয়ে কোনাে একটা চাকরি করাে।

32.অল্পের উপর দিয়ে যাওয়া (সামান্য কষ্ট বা ক্ষতিতেই রেহাই পাওয়া) দুর্ঘটনায় তাদের বড় কিছু হয়নি, অল্পের ওপর দিয়েই গেছে।

33.অশেষপ্রকারে (সর্বপ্রকারে, সর্বতােভাবে) তার রােগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকেরা অশেষপ্রকারে চেষ্টা করেছেন।

34.অশ্বডিম্ব (অলীক বস্তু, যার অস্তিত্বই নেই এমন জিনিস)- এত খাটনি খেটে কি লাভ হলাে? পেলাম তাে অশ্বডিম্ব।

35. অষ্টকপাল (আটকপালে; হতভাগ্য)— আমার মতাে অষ্টকপাল লােকের আশা কি পূর্ণ হবে?

36. অষ্টরম্ভা (কাঁচকলা; কিছুই না)— সবাই কিছু কিছু পেল, কিন্তু আমি পেলাম। অষ্টরম্ভ/নেতারা লম্বা লম্বা বক্তৃতা করেন, কিন্তু কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা।

37.অসাধ্যসাধন (সুকঠিন কাজ সম্পাদন)— এমন বিপথগামী ছেলের শুভবুদ্ধি। জাগিয়ে তুমি অসাধ্যসাধন করেছ।

38.অসামাল হয়ে পড়া (নিজেকে সামলাতে না পারা)শােকের আবেগে তিনি অসামাল হয়ে পড়লেন।

39.অসার-সুসার (অসুবিধা ও সুবিধা)— অন্যের অসার-সুসার বিবেচনা না করলে চলবে কেন?

40.অসূর্যম্পশ্যা (বাড়ির বাইরে বেরােয় না এমন)— মেয়েকে অসূর্যম্পশ্যা করে। রাখলেই কি বাইরের প্রভাব আটকাতে পারবে?

41.অস্ত যাওয়া (পতন হওয়া/অবসান হওয়া) ইংরেজ শাসকরা কি কোনােদিন ভেবেছিল যে তাদের সাম্রাজ্যও একদিন অস্ত যাবে?

42.অন্তব্যস্ত (অস্থির/অতি ব্যস্ত/ব্যতিব্যস্ত)— তার অন্তব্যস্ত ভাব দেখেই বুঝেছি সে। ভেতরে ভেতরে উদ্বিগ্ন রয়েছে।

43.অস্তিনাস্তি (থাকা বা না থাকা, অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব)— ঈশ্বরের অস্তিনাস্তি জানি না ভাই, আমি পূজো করবই।

44.অস্থানে কুস্থানে (আজেবাজে জায়গায়/নিষিদ্ধ বা মন্দ জায়গায়)— অস্থানে কুস্থানে যাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে।

45.অস্থিচর্মসার (শরীরে কেবল হাড় ও চামড়া আছে এমন অবস্থাপ্রাপ্ত/অত্যন্ত কৃষ বা শীর্ণ) দীর্ঘকাল রােগে ভুগে ভুগে তার শরীর একেবারে অস্থিচর্মসার হয়েছে।

46.অহঙ্কারে মাটিতে পা না পড়া (অতিরিক্ত দম্ভে কাউকে গ্রাহ্য না করা)—বড় ঘরে ; বিয়ে হয়েছে বলে অহঙ্কারে মেয়েটির মাটিতে পা পড়ে না।

47.অন্ধকার দেখা (বিপদে পড়ে ভয় ও ভাবনায় আল হওয়া) পিতৃমাতৃহীন অকবর দেনার দায়ে গৃহহীন হয়ে দুই চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল।

48.অন্ধকারে থাকা (কোনাে বিষয়ে অনভিজ্ঞ থাকা)– আমি তাে সব সময়ই অন্ধকারে থাকলাম, অথচ কি দোযে আমাকে দোষী করছাে, ভাই?

49.সকালকাসুম (অসম্ভব জিনিস)- অকালকুসুম আশা কোরাে না, তাতে তােমার দুঃখই বাড়বে।

 50.অকালপক (ইচরে পাকা)- এমন অকালপক্ক ছেলেকে যে সবাই অপছন্দ করবে সেটাই তাে স্বাভাবিক।

51.অকুল পাথার (সীমাহীন বিপদ/মহাসংকট)– অকূল পাথারে পড়েছি ভাই, কি করে উদ্ধার পাব জানি না।

52.অকূলে ভাসা (ভীষণ সংকটে পড়ে দিশাহারা হওয়া) স্বামীপুত্র হারিয়ে মেয়েটি অকূলে ভাসছে।

53. অক্ষয়ভাণ্ডার (যে ভাণ্ডারের ধন কখনাে ফুরায় না) তার কি অক্ষয়ভাণ্ডার আছে যে রাজাসু লােককে চিরদিন খাওয়াবে?

54.অক্ষর-পরিচয় (সামান্য বিদ্যাবর্ণপরিচয়/বর্ণজ্ঞান)= আট বছর বয়স হতে। চলল, এখনাে ছেলের অক্ষর পরিচয় হয়নি।

55.অগজ-বগড়, অগড়ম-গড়ম (অর্থহীন বা আবােলতাবােল কথা/পাগলের প্রলাপ)— তখন থেকে কি অগড়ম-গড়ম বকে যাচ্ছ?

56.অগতির গতি (নিরুপায়ের সহায়, অসহায়ের আশ্রয়) এই ঘাের বিপদে তুমিই অগতির গতি।

57.অগত্যা মধুসূদন (অনন্যোপায় হয়ে উপায়ান্তর না থাকায়) তার অনুরােধ এড়াতে পারলাম না, অগত্যা মধুসূদন আর কি।

58.অকান্ত, অগারাম, অগাচী (একেবারে নির্বোধ, নিরেট বােকা)- তার মতাে। অগারামকে নিয়ে এ কাজ হবে না।

59.অগা মেরে যাওয়া (বােকা হয়ে যাওয়া, অকর্মণ্য হয়ে যাওয়া) ছেলেটা দিনদিন একেবারেই অগা মেরে যাচ্ছে।

60.অগ্নিগর্ভ  (তেজপূর্ণ)—তার অগ্নিগর্ভ বক্তৃতায় সকলেই অনুপ্রাণিত হয়।

61. অগ্রপশ্চাৎ  (আগপাছ/সব দিক)— অগ্রপশ্চাৎ ভেবে কাজ করলে সমস্যায় পড়তে হয় না।

62.অঘটন-ঘটন-পটীয়সী  (যে স্ত্রীলােক অঘটন ঘটাতে পারে)- তার মতাে। অঘটনঘটনপটীয়সী স্ত্রীলােকের পক্ষে সবই সম্ভব।

63.অঘাটে জল খাওয়া  (ভুল বা বাজে জায়গায় কাজের চেষ্টা করা’বাজে কাজ, ভুল কাজ বা অনুচিত কাজ )— অনেক অঘাটে জল খেয়ে এখন তার বুদ্ধি খুলেছে।

64.অঙুলি-নির্দেশ/অঙুলি-সংকেত (আঙুল দিয়ে ইশারা বা নির্দেশ, নির্দেশ)— সমস্ত ঘটনাটা তারই অলি-সংকেতে ঘটেছে।

65.অজ পাড়াগাঁ (একেবারে গ্রাম/গগ্রাম)—তার মতাে শহুরে লােক এই অজ পাড়াগায়ে এসে থাকতে পারবে?

66.অজুহাত দেখানাে (তুচ্ছ এবং অপ্রকৃত কারণকে প্রকৃত কারণ হিসেবে দেখানাে) বাজে অজুহাত দেবার চেষ্টা করাে না। তুমি যে সেদিন ইচ্ছে করেই | অমনি সে তাে বােঝাই যাচ্ছে।

67.অঞ্চলের নিধি (যে সম্পদ আঁচলে ঢেকে সুরক্ষিত রাখতে হয়/সন্তান)- তিনি। অলর নিধিটিকে চােখের আড়াল করতে চান না।

68.সড়বড় (অর্থহীন ও দ্রুত উচ্চারিত কথা)— অড়বড় সড়বড় করে কি যে লল তার কিছুই বােঝা গেল না।

67.অতলে তলানাে (ডুবে যাওয়া/হারিয়ে যাওয়া বিস্মৃত হওয়া) কত সস্তাবনাময় “রুশ বিপথগামী হয়ে অতলে তলিয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই।

68. অতিমানুষ, অতিমানব (অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ)— এ কাজ কেবল একজন অতিমানুষের পক্ষেই সম্ভব।

69.অথৈ জল (গভীর সংকট, ঘাের বিপদ)—বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে ছেলেটা অথৈ জলে পড়েছে।

70. অদৃষ্টের পরিহাস (ভাগ্যের বিড়ম্বনা) অদৃষ্টের পরিহাসে রাজা ফকির হয়েছেন।

Share on

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 15 =